CC-01 Study Notes Marks 7 & 16 (Bengali Version)

CC-01 Study Notes Marks 7 & 16 (Bengali Version)

G Success for Better Future
0

 CC-01 

Study Notes 

Marks 7 & 16

 (Bengali Version)


প্রশ্ন : ‘সক্রিয় অনুবর্তন’ তত্ত্বটি কার? এই তত্ত্বের মূল ধারণাটি সংক্ষেপে বিবৃত করুন।

উত্তর:

১. তত্ত্বপ্রবর্তক:

সক্রিয় অনুবর্তন’ (Active Adaptation) তত্ত্বটির প্রবর্তক হলেন জ্যঁ পিয়াজে (Jean Piaget), একজন সুইস মনোবিজ্ঞানী ও জ্ঞানতত্ত্ববিদ।

২. মূল প্রেক্ষাপট:

এই তত্ত্বটি শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশ (Cognitive Development) সংক্রান্ত। পিয়াজে শিশুদের শেখার প্রক্রিয়াকে সক্রিয় হিসেবে দেখেন। তাঁর মতে, শিশু নিজে পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়াশীল সম্পর্ক স্থাপন করে জ্ঞান অর্জন করে।

৩. ‘সক্রিয় অনুবর্তন’ এর মূল ধারণা:

  • ক. সক্রিয় অংশগ্রহণ: শিশু কেবলমাত্র বাহ্যিক উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া করে না, সে নিজে সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে সচেষ্ট থাকে।
  • খ. পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া: শিশু তার চারপাশের জিনিসপত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, চিন্তা করে, এবং ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে।
  • গ. আত্ম-সংগঠনের ক্ষমতা: শিশু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন ধারণা গঠন করে এবং পুরাতন ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নেয়।
  • ঘ. সামঞ্জস্য ও সহমিলন (Accommodation & Assimilation): শিশু পুরনো ধারণাকে পরিবর্তন করে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ায় (Accommodation) এবং বিদ্যমান জ্ঞানের কাঠামোর মধ্যে নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করে (Assimilation)
  • ঙ. বয়স অনুযায়ী ধাপে ধাপে বিকাশ: পিয়াজে মতে, শিশুদের বৌদ্ধিক বিকাশ নির্দিষ্ট ধাপে ঘটে যেমন সংবেদী-গত্যাত্মক, পূর্ব-সংজ্ঞাপক, সাংগঠনিক এবং আনুষ্ঠানিক চিন্তনের স্তর।

৪. উপসংহার:

সক্রিয় অনুবর্তন তত্ত্বে শিশু প্যাসিভ গ্রহণকারী নয়, বরং জ্ঞান আহরণে একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। সে নিজে চিন্তা করে, প্রশ্ন তোলে, সমস্যার সমাধান খোঁজে এবং নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে শেখে। এই তত্ত্ব শিশুর আত্ম-নির্ভরশীল শেখাকে গুরুত্ব দেয়।

 

প্রশ্ন : 'মনোযোগের' যে কোনো সাতটি নির্ধারক সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।
উত্তর:

মনোযোগ একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা নির্দিষ্ট বস্তু বা কার্যকলাপের প্রতি মানসিক কেন্দ্রীকরণ বোঝায়। মনোযোগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক নিচে আলোচনা করা হলো:

১. উদ্দীপনার প্রকৃতি (Nature of Stimulus):

উজ্জ্বল, চলমান, আকর্ষণীয় বা ভিন্নধর্মী বস্তু সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করে। যেমন—আচমকা শব্দ বা আলো।

২. প্রাসঙ্গিকতা (Relevance):

যে বিষয়টি ব্যক্তির চাহিদা বা আগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেটির প্রতি মনোযোগ বেশি থাকে। যেমন—ক্ষুধার সময় খাদ্যসংক্রান্ত বিষয়ে মনোযোগ বেশি থাকে।

৩. আকর্ষণীয়তা ও নতুনত্ব (Novelty and Attractiveness):

নতুন বা অপরিচিত জিনিস মানুষের কৌতূহল জাগায় এবং মনোযোগ আকর্ষণ করে।

৪. অনুশীলন ও অভ্যাস (Practice and Habit):

যে কাজের প্রতি নিয়মিত চর্চা থাকে, তার প্রতি মনোযোগ স্থির থাকে। অভ্যস্ত কাজ মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৫. শারীরিক ও মানসিক অবস্থা (Physical and Mental Condition):

শরীরের ক্লান্তি, উদ্বেগ, অসুস্থতা বা অতিরিক্ত উত্তেজনা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। সুস্থতা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৬. অভিপ্রায় ও উদ্দেশ্য (Intention and Purpose):

যদি কোনও কাজ নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য করা হয়, তবে মনোযোগ বেশি থাকে। উদাহরণ: পরীক্ষার পড়া।

৭. ব্যক্তিত্ব ও আগ্রহ (Personality and Interest):

বিষয়ের প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ থাকলে তার মনোযোগ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি মনোযোগে স্থির থাকে।

উপসংহার:
মনোযোগের উপর বহুবিধ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদান প্রভাব ফেলে। মনোযোগ উন্নয়নের জন্য পরিবেশ ও মানসিক প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

প্রশ্ন : খেলার সঙ্গে শিশুর শারীরিক ও সামাজিক বিকাশের সম্পর্ক সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
উত্তর:

খেলা শিশুদের প্রাকৃতিক কার্যকলাপ। এটি শুধু আনন্দের উৎস নয়, বরং শিশুর সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে শারীরিক ও সামাজিক বিকাশে খেলার প্রভাব তুলে ধরা হলো।

১. শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে খেলার প্রভাব:

ক. মাংসপেশি ও হাড়ের বিকাশ:

দৌড়ানো, লাফানো, ঝাঁপানো ইত্যাদি ক্রিয়াকলাপে শিশুদের পেশি ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়।

খ. সমন্বয় ও ভারসাম্য:

খেলার মাধ্যমে শিশু হাত-চোখ সমন্বয়, চলাফেরার ভারসাম্য বজায় রাখা, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির সমন্বয় শেখে।

গ. স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ:

নিয়মিত খেলা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্থূলতা রোধ করে।

ঘ. শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি:

শারীরিক খেলা শিশুর স্ট্যামিনা ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করে।

২. সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে খেলার প্রভাব:

ক. দলগত কাজ শেখা:

দলবদ্ধ খেলায় শিশুরা সহযোগিতা, দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্ব গুণ অর্জন করে।

খ. নিয়ম মানা ও শৃঙ্খলা:

খেলার নিয়ম মানতে গিয়ে শিশুরা শৃঙ্খলা ও ন্যায্যতার গুরুত্ব বোঝে।

গ. সামাজিক সম্পর্ক গঠন:

সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে শিশুরা বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং সামাজিক আচরণ শেখে।

ঘ. আবেগ নিয়ন্ত্রণ:

জয় ও পরাজয় উভয়কেই গ্রহণ করার মাধ্যমে শিশু আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সহনশীলতা শেখে।

উপসংহার:

খেলা শিশুর জন্য শুধুই বিনোদন নয়, বরং এটি তার শারীরিক সক্ষমতা ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির এক কার্যকর মাধ্যম। একটি স্বাস্থ্যকর ও গঠনমূলক খেলার পরিবেশ শিশুর সামগ্রিক বিকাশে সহায়ক।

 

প্রশ্ন : শিশুরা অনুকরণের মাধ্যমে কীভাবে শেখে তার দুটি উদাহরণ দিন।

উত্তর:

অনুকরণ (Imitation) হল শেখার একটি প্রাথমিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শিশুরা পরিবেশে দেখা বিভিন্ন আচরণ, ভাষা, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি গ্রহণ করে। শিশুরা প্রাথমিক জীবনের অধিকাংশ শিক্ষা অনুকরণের মাধ্যমেই লাভ করে।

উদাহরণ ১: ভাষা শেখার প্রক্রিয়া

  • বর্ণনা:
    শিশু তার চারপাশে বড়দের কথা বলার ধরন শুনে শুনে একইভাবে উচ্চারণ করতে শেখে। যেমন—মা "জল" বললে শিশুও ধীরে ধীরে শব্দটি উচ্চারণ করে শেখে।
  • বিশ্লেষণ:
    এখানে কোন সরাসরি শেখানো নেই, বরং অনুকরণের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা ঘটে। এটি প্রাকৃতিকভাবে বিকশিত হয়।

উদাহরণ ২: সামাজিক আচরণ শেখা

  • বর্ণনা:
    যেমন, মা-বাবা কাউকে নমস্কার করলে বা "ধন্যবাদ" বললে শিশুও একই আচরণ করতে শেখে।
  • বিশ্লেষণ:
    এইভাবে শিশুরা সামাজিক শিষ্টাচার, আচরণবিধি, সৌজন্যবোধ ইত্যাদি অনুকরণ করে শেখে যা ভবিষ্যৎ সামাজিক জীবনের ভিত্তি গঠন করে।

উপসংহার:

শিশুরা নিজে থেকে বিশ্লেষণ না করেও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বড়দের কাজ বা কথা অনুকরণ করে শেখে। অনুকরণ শিশু বিকাশের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শেখার প্রাথমিক ধাপে অপরিহার্য।

 

প্রশ্ন : 'আত্মবোধ' বলতে কী বোঝেন? এর যে-কোনো চারটি নির্ধারক সংক্ষেপে বিবৃত করুন।

উত্তর:

আত্মবোধ (Self-concept) বলতে শিশুর নিজের সম্পর্কে ধারণা বোঝায়—"আমি কে", "আমি কী পারি", "আমার মূল্য কত", ইত্যাদি সম্পর্কে তার অভ্যন্তরীণ উপলব্ধি।

আত্মবোধের চারটি নির্ধারক:

১. পারিবারিক পরিবেশ:

  • শিশুর প্রতি মা-বাবা, ভাই-বোনের ব্যবহার, প্রশংসা বা সমালোচনা তার আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • যদি পরিবারে ভালোবাসা ও সম্মান পায়, তবে আত্মবোধ শক্তিশালী হয়।

২. শিক্ষক ও বিদ্যালয়:

  • শিক্ষকের আচরণ, প্রতিক্রিয়া ও স্বীকৃতি শিশুর আত্মবোধে প্রভাব ফেলে।
  • যেমন—শিক্ষকের উৎসাহ বা পুরস্কার পেলে সে নিজেকে যোগ্য মনে করে।

৩. বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক:

  • সহপাঠীদের গ্রহণযোগ্যতা বা প্রত্যাখ্যান শিশুর আত্মবোধকে গঠন করে।
  • পিয়ার গ্রুপে গ্রহণযোগ্যতা থাকলে শিশুর আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

৪. সাফল্য ও ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা:

  • শিশুর প্রাপ্ত সাফল্য (যেমন—ভালো ফল, প্রতিযোগিতায় জয়) আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।
  • ব্যর্থতা বারবার ঘটলে সে নিজেকে অক্ষম ভাবতে পারে।

উপসংহার:

আত্মবোধ শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে এক মৌলিক ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু আত্মমর্যাদাকেই নয়, বরং তার শিক্ষা, আচরণ ও ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রভাব ফেলে।

 

প্রশ্ন : উত্তর বাল্যকাল পর্যায়ে শিশুর প্রক্ষোভিক বিকাশ বর্ণনা করুন।

উত্তর:

উত্তর বাল্যকাল (Late Childhood) বা ৬-১২ বছর বয়সের সময়কাল শিশুদের সামাজিক ও আবেগীয় (প্রক্ষোভিক) বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ সময়ে শিশু বাহ্যিক জগতের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত হয় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখে।

১. আবেগের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি:

  • এই সময়ে শিশু ধীরে ধীরে রাগ, আনন্দ, দুঃখ ইত্যাদি আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।
  • আচরণে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের প্রকাশ দেখা যায়।

২. আত্ম-সম্মান ও আত্মচেতনা বৃদ্ধি:

  • শিশুরা নিজেদের মূল্যবোধ, দক্ষতা ও পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করে।
  • প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বৃদ্ধি পায়, ফলে আত্মবিশ্বাস গঠন ঘটে।

৩. সহানুভূতি ও সহযোগিতার বোধ:

  • শিশু এই পর্যায়ে অন্যের অনুভূতি বোঝে, সহানুভূতি দেখায় এবং সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
  • তারা দলে কাজ করতে শেখে এবং সামাজিক নিয়ম বুঝতে শুরু করে।

৪. ভয় ও লজ্জার অনুভব:

  • শিশু এই পর্যায়ে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন হয়, ফলে ভয় বা লজ্জা পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
  • যেমন—পরীক্ষায় খারাপ ফল করলে বা শিক্ষকের বকুনিতে লজ্জা অনুভব করা।

৫. নৈতিকতা ও মূল্যবোধের গঠন:

  • শিশু সঠিক-ভুল, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বোঝার চেষ্টা করে এবং অভ্যন্তরীণ নৈতিকতা তৈরি হয়।
  • পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজের ভূমিকা এতে গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার:

উত্তর বাল্যকাল শিশুর প্রক্ষোভিক বিকাশের একটি সংবেদনশীল ও কাঠামোগত পর্যায়। এ সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ, আত্মপরিচয় গঠন, সহানুভূতি ও নৈতিকতা বিকাশ লাভ করে, যা ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।

প্রশ্ন : স্পিনারের ‘সক্রিয় অনুবর্তন’ তত্ত্বের মূলনীতিগুলি বর্ণনা করুন।

উত্তর:

প্রবক্তা: আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী জেরোম ব্রুনার (Jerome Bruner) স্পিনারের সক্রিয় অনুবর্তন তত্ত্ব (Spiral Curriculum and Active Adaptation Theory) প্রদান করেন।

মূলধারণা:
সক্রিয় অনুবর্তন’ তত্ত্ব অনুসারে, শিশু নিজে সক্রিয়ভাবে পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে জ্ঞান গঠন করে। এটি একটি পুনরাবৃত্তিমূলক শিখন পদ্ধতি, যেখানে একই ধারণাকে ক্রমান্বয়ে গভীর ও বিস্তৃতভাবে শেখানো হয়।

মূলনীতিগুলি:

১. সক্রিয় অংশগ্রহণ:

শিক্ষার্থীকে কেবল তথ্য গ্রাহক হিসেবে নয়, বরং তথ্য অনুসন্ধানকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা সমস্যা সমাধান করে শেখে।

২. পূর্বজ্ঞান ভিত্তিক শিখন:

শিক্ষণ পূর্বজ্ঞান বা পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্মিত হয়। নতুন ধারণা পুরাতনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

৩. পুনরাবৃত্তিমূলক পাঠক্রম (Spiral Curriculum):

একই বিষয়কে বিভিন্ন স্তরে, ক্রমশ জটিলভাবে শেখানো হয়। এটি শেখার গভীরতা ও অনুশীলন বৃদ্ধি করে।

৪. সক্রিয় মানসিক প্রক্রিয়া:

শিক্ষার্থীরা বিশ্লেষণ, তুলনা, মূল্যায়ন ইত্যাদি উচ্চ মানসিক ক্রিয়া ব্যবহার করে শিখে।

৫. শিখনের সামাজিক প্রেক্ষাপট:

শেখার জন্য সামাজিক আলোচনা, সহপাঠীদের সহযোগিতা এবং শিক্ষকের সহানুভূতিশীল ভূমিকা জরুরি।

উপসংহার:
ব্রুনারের তত্ত্ব শেখাকে সক্রিয়, অর্থপূর্ণ ও প্রগতিশীল হিসেবে তুলে ধরে। এটি শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষাদর্শের এক শক্তিশালী ভিত্তি।

 

প্রশ্ন : খেলার যে কোনো একটি সংজ্ঞা লিখুন। শিশুর সামাজিক ও প্রক্ষোভিক বিকাশে খেলার যে কোনো তিনটি গুরুত্ব বলুন।

উত্তর:

খেলার সংজ্ঞা:

ফ্রয়েড খেলা সম্পর্কে বলেছেন—
“Play is the child’s work.”
অর্থাৎ খেলা শিশুর প্রকৃত কাজ; এটি তার মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশের প্রাকৃতিক মাধ্যম।

খেলার সামাজিক ও প্রক্ষোভিক বিকাশে তিনটি গুরুত্ব:

১. সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের বিকাশ:

দলগত খেলায় শিশুরা সহযোগিতা, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব শেখে।

২. আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রকাশের দক্ষতা:

খেলার মাধ্যমে শিশু আনন্দ, রাগ, পরাজয়, জয়—সব ধরনের আবেগ প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। এতে মানসিক ভারসাম্য তৈরি হয়।

৩. নৈতিকতা ও নিয়ম মানার অভ্যাস:

খেলায় নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। শিশুরা নিয়ম মানা, জয়-পরাজয় মেনে নেওয়া এবং ন্যায়বিচার শেখে—এটি তার প্রক্ষোভিক গঠনে সহায়ক।

উপসংহার:
খেলা শিশুর সামগ্রিক বিকাশের এক অনন্য হাতিয়ার, বিশেষ করে সামাজিক ও আবেগীয় দিকগুলোতে এর প্রভাব অত্যন্ত ইতিবাচক।

 

প্রশ্ন : প্রচেষ্টা ও ভুল সংক্রান্ত শিখনের তত্ত্বটি কার? এই তত্ত্বের তিনটি বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।

উত্তর:

প্রবক্তা:

এই তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন এডোয়ার্ড এল. থরন্ডাইক (Edward L. Thorndike)

মূলধারণা:

Trial and Error Learning Theory অনুসারে, শিখন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তিরা বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে সঠিক প্রতিক্রিয়া (Response) নির্ধারণ করতে শেখে।

তিনটি বৈশিষ্ট্য:

১. প্রচেষ্টা পুনরাবৃত্তি (Multiple Attempts):

শিক্ষার্থী একাধিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সঠিক উত্তর বা পথ খুঁজে পায়।

২. ভুল থেকে শিক্ষা (Learning from Errors):

প্রথমে ভুলের মাধ্যমে শেখে, পরবর্তীতে ভুল সংশোধন করে সঠিক পদ্ধতি গঠন করে।

৩. সাফল্যের প্রতিক্রিয়া জোরদার (Law of Effect):
যে প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্টি মেলে, তা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্ত হয় এবং শেখার স্থায়ীত্ব পায়।

উপসংহার:
থরন্ডাইকের এই তত্ত্ব শিখনকে বাস্তবভিত্তিক ও অভিজ্ঞতাপ্রসূত একটি প্রক্রিয়া হিসেবে তুলে ধরে।

 

প্রশ্ন : বহুভাবিক শ্রেণিকক্ষের চারটি বৈশিষ্ট্য লিখুন। এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের তিনটি গুরুত্ব দিন।

উত্তর:

বহুভাবিক শ্রেণিকক্ষ (Multigrade/Multi-class Classroom):

এটি একটি শ্রেণিকক্ষ যেখানে একাধিক শ্রেণি বা বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের একত্রে শিক্ষা দেওয়া হয়, বিশেষত গ্রামীণ বা সীমিত সম্পদের বিদ্যালয়ে।

চারটি বৈশিষ্ট্য:

১. একাধিক শ্রেণি একত্রিত:

একই কক্ষে একাধিক শ্রেণির শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে, যেমন—ক্লাস ১ ও ২ একসঙ্গে পড়ানো হয়।

২. সীমিত শিক্ষক:

একজন শিক্ষক একাধিক শ্রেণির দায়িত্ব পালন করেন।

৩. পর্যায়ভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা:

পাঠ পরিকল্পনা এমনভাবে তৈরি হয় যাতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য উপযোগী হয়।

৪. স্বনির্ভর ও পারস্পরিক শিক্ষণ:

শিক্ষার্থীরা পরস্পরের সাহায্যে শেখে, এবং আত্ম-শিক্ষা দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

শিক্ষকের তিনটি গুরুত্ব:

১. কার্যকর পাঠ পরিকল্পনা:

শিক্ষককে বয়স ও শ্রেণিভেদে আলাদা পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে হয় যাতে প্রত্যেকে উপকৃত হয়।

২. নেতৃত্ব ও সমন্বয়:

শিক্ষককে নেতৃত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হয়।

৩. সময় ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ ব্যবহার:

শিক্ষককে দক্ষভাবে সময় ভাগ করে পাঠদান করতে হয় এবং সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করতে হয়।

উপসংহার:
বহুভাবিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার মাধ্যমে এই শ্রেণিকক্ষ কার্যকর শেখনকেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে পারে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
google.com, pub-9854479782031006, DIRECT, f08c47fec0942fa0