ধ্বনি
ধ্বনি
কাকে বলে?
কোনো
ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদানসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে
ধ্বনি বলে। ধ্বনির সঙ্গে সাধারণত অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকে না, ধ্বনি তৈরি হয় বাগ্যন্ত্রের
সাহায্যে। ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাগ্-প্রত্যঙ্গ সহায়তা করে সেগুলো হলো ফুসফুস, গলনালি,
জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি ।
মানুষ
ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। ফুসফুস থেকে বাতাস বাইরে আসার সময় মুখের
বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায় । ফলে মুখে নানা ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়। তবে সব ধ্বনিই
সব ভাষা গ্রহণ করে না।
স্বর
ধ্বনি কাকে বলে?
স্বরধ্বনিঃ
যেসকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোন
প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি । বাংলা স্বরধ্বনি ১১ টি। যেমন – অ,আ,ই,ঈ
ইত্যাদি ।
স্বরধ্বনির প্রকারভেদ
স্বরধ্বনি
আবার ৩ প্রকার । যথা- হ্রস্বস্বর, দীর্ঘস্বর, দ্বৈতস্বর বা যৌগিক স্বর
হ্রস্বস্বরঃ যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের কম সময় লাগে তাদেরকে হ্রস্বস্বর
বলা হয়। হ্রস্বস্বর ৪ টি। যথা- অ, ই, উ, ঋ
দীর্ঘস্বরঃ যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে
তাদেরকে দীর্ঘস্বর বলা হয় । দীর্ঘস্বর ৫ টি । যথাঃ আ, ঈ,উ,এ,ও ।
দ্বৈতস্বর
বা যৌগিক স্বরঃ স্বরধ্বনির সম্মিলিত রূপকে
দ্বৈতস্বর বা যৌগিক স্বর বলা হয়। যেমন – ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ)।
স্বরধ্বনি
আবার দুইভাবে বিভক্ত। যথা- মৌলিক স্বর ও যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বর বা দ্বৈতস্বর
মৌলিক
স্বরঃ যে স্বরধ্বনি এককভাবে উচ্চারিত
হয় তাকে মৌলিক স্বর বলে। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বর ৯ টি । যথা- অ,আ,ই,ঈ,উ,ঊ, ঋ,এ,ও.
যৌগিক
স্বর বা দ্বিস্বর বা দ্বৈতস্বরঃ
পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনিরূপে
উচ্চারিত হয়। এরূপ একসাথে উচ্চারিত দুটি মিলিত ধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বর বা
দ্বৈতস্বর বলে। বাংলা ভাষায় এরূপ ২৫ টি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে। যেমন – আ+ই = আই (যাই,
ভাই), আ+এ= আয় (যায়, খায়) ইত্যাদি ।আর বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক ধ্বনিজ্ঞাপক বর্ণ
মাত্র ২ টি । যথা – ঐ, ঔ ।
ব্যাঞ্জন
ধ্বনি কাকে বলে
ব্যাঞ্জন
ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও
না কোথাও বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে ব্যাঞ্জন ধ্বনি বলে। যেমন – ক,খ,গ,ঘ
ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনি 39 টি।
ব্যঞ্জন ধ্বনির প্রকারভেদ
ব্যঞ্জনধ্বনি
৪ প্রকার। যথা – স্পর্শ ধ্বনি বা স্পর্শ বর্ণ,আনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ,উষ্ম ধ্বনি
বা উষ্ম বর্ণ,অন্তঃস্থ ধ্বনি বা অন্তঃস্থ বর্ণ
স্পর্শ
ধ্বনি বা স্পর্শ বর্ণঃক থেকে ম পর্যন্ত ২৫ টি বর্ণকে স্পর্শ ধ্বনি বা স্পর্শ বর্ণ বলা
হয়। এ পঁচিশটি ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখ
গহ্বরের কোন না কোন জায়গায় স্পর্শ করে যায়, এজন্য এগুলোকে স্পর্শ ধ্বনি বা সৃষ্ট
ধ্বনি বলা হয়। এগুলোকে আবার ৫ টি বর্গে বা গুচ্ছে ভাগ করা
হয়।
যেমন –
স্পর্শ
ধ্বনি বা স্পর্শ বর্ণের প্রকারভেদ
উচ্চারণ
বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – অঘোষ ধ্বনি
ও ঘোষ ধ্বনি
অঘোষ
ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়
স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন- গ,ঘ,জ ইত্যাদি ।
ঘোষ
ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়
স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন – - ক, খ, চ ইত্যাদি। ঘোষ ধ্বনি
আবার ২ প্রকার। যথা-
·
অল্পপ্রাণ ধ্বনি
·
মহাপ্রাণ ধ্বনি
অল্পপ্রাণ
ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়
বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে, তাদেরকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলা হয় । যেমন - ক,গ,চ ইত্যাদি
।
মহাপ্রাণ
ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়
বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে, তাদেরকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলা হয়। যেমন – খ,ঘ,ছ ইত্যাদি
।
নাসিক্য
/ আনুনাসিক ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি উচ্চারণে
নাক ও মুখ দিয়ে বা কেবল নাক দিয়ে ফুসফুস তাড়িত বাতাস বের হয়ে উচ্চারিত হয়, সে
ধ্বনিগুলোকে নাসিক্য ধ্বনি বলে। নাসিক্য ধ্বনি ৫টি। এগুলো হলো - গু,ঞ,ণ,ন,ম ।
উষ্ম
ধ্বনি বা উষ্ম বর্ণঃ যে ব্যঞ্জনের উচ্চারণে
বাতাস মুখবিবরে কোথাও বাধা না পেয়ে কেবল ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং শিশধ্বনির সৃষ্টি করে,
সেটি উষ্ম ধ্বনি বা উষ্ম বর্ণ। শিশ দেওয়ার সাথে এর সাথে এর সাদৃশ্য রয়েছে বলে একে
শীশধ্বনিও বলা হয়। যেমন শ, ষ, স, হ
অন্তঃস্থ
ধ্বনি বা অন্তঃস্থ বর্ণঃ যেসব ধ্বনির উচ্চারণ
স্পর্শ ও উষ্মধ্বনির মাঝামাঝি তাদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বা অন্তঃস্থ বর্ণ বলে। যেমন
– য, র, ল, ব।
এছাড়াও
আরও কয়েকটি ধ্বনি রয়েছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-
তালব্য
ধ্বনিঃ যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় সম্মুখ
তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়, তাকে তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন - য ।
তাড়নজাত
বা তাড়িত ধ্বনিঃ যেসব ধ্বনি জিহ্বার
অগ্রভাগের তলদেশ দ্বারা অর্থাৎ, উল্টো পিঠের দ্বারা ওপরের দন্তমূলে দ্রুত আঘাত বা তাড়না
করে উচ্চারিত হয়, তাদেরকে তাড়নজাত বা তাড়িত ধ্বনি বলে। যেমন – ড়, ঢ় ।
পার্শ্বিক
ধ্বনিঃ ফুসফুস থেকে বাতাস বের হওয়ার
সময় জিহ্বার দুপাশ দিয়ে বের হলে আমরা যে ধ্বনি পাই, তাকে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে। যেমন
– ল।
কম্পনজাত
ধ্বনিঃ যে ধ্বনি জিহ্বার অগ্রভাগকে
কম্পিত করে এবং তা দ্বারা দন্তমূলকে একাধিকবার দ্রুত আঘাত করে উচ্চারিত হয় তাকে কম্পনজাত
ধ্বনি বলে কম্পনজাত ধ্বনি ১ টি । যেমন – র ।
অনুনাসিক
ধ্বনিঃ যে ধ্বনি স্বরধ্বনির অনুনাসিকতার
দ্যাতেনা করে, তাকে অনুনাসিক ধ্বনি বলে । যেমন – *।
যুক্ত
ব্যঞ্জনধ্বনিঃ দুই বা তার বেশি ব্যঞ্জনধ্বনির
মধ্যে কোন স্বরধ্বনি না থাকলে সে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো একত্রে উচ্চারিত হয়, এরূপ ধ্বনিকে
যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ক + ত = ক্ত, ঙ + গ = ঙ্গ ইত্যাদি।